বাচ্চাদের জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে | জন্ম নিবন্ধন করার উপায় ২০২৩
বাচ্চাদের জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম ২০২৩ - ছোট বয়সে দেশের নাগরিকের প্রথম প্রমান হলো জন্ম নিবন্ধন। আমরা বাচ্চাদের জন্ম নিবন্ধন করতে তখন যাই যখন আমাদের জন্ম নিবন্ধন কার্ডটি দরকার পড়ে। আর যখন দরকার হয় তখন জন্ম নিবন্ধনের কাগজ পেতে আমাদের অনেকটা বেগ পেতে হয়। অনেকের ভেতরে ধারনা থাকে যে বাচ্চার বয়স কম থাকলে হয়তো জন্ম নিবন্ধন করা যায় না। আবার অনেকে বলে বাচ্চা একটু বড় হোক তারপর বাচ্চার জন্ম নিবন্ধন করবো।
আসলে কতটুকু বয়স থেকে জন্ম নিবন্ধন করা যায় এবং বাচ্চার জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো আজকের পোস্টে। আপনারা যদি পুরো পোস্ট পড়ে থাকেন তাহলে আর বাচ্চার জন্য জন্ম নিবন্ধন করাতে গিয়ে তেমন বিপদে পড়তে হবে না।
আমাদের গুগল নিউজ ফলো করার আমন্ত্রন রইল।
জন্ম নিবন্ধন কি?
আমাদের প্রথমে জেনে রাখা উচিত যে জন্ম নিবন্ধন কি? জন্ম নিবন্ধন হলো একটি সদ্য জন্ম নেওয়া বাচ্চার তথ্যাবলি সরকারি রেজিস্টার খাতায় লিপিবদ্ধ করার একটি পদ্ধতি মাত্র। আপনি যদি বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রমান করতে চান তাহলে জন্ম নিবন্ধন হলো একটি গুরুত্বপূর্ন প্রমান পত্র। তাই আপনাকে রাষ্ট্র থেকে নাগরিকত্ব প্রমান করতে হলে অবশ্যই জন্ম নিবন্ধন করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা।
আগে যদিও অফলাইনে জন্ম নিবন্ধনের কাজ হতো কিন্তু বর্তমানে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করা যায় এবং এটি সর্বাধিক গ্রহনযোগ্য। কারন এটাকে অনেকে আবার ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন বলে থাকে।
জন্ম নিবন্ধনের প্রয়োজনীয়তা কি
বাচ্চাদের জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে
০ থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত বাচ্চার জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে
- অনলাইনে আবেদন করা ফরমের প্রিন্ট কপি। ( প্রিন্ট কপি অবশ্যই ক্লিয়ার হতে হবে)
- শিশুর সদ্যতোলা এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- শিশুর টিকা প্রদানের কার্ডটি নিয়ে আসতে হবে।
- শিশুর জন্ম স্থান বা জন্ম তারিখের প্রমান পত্র সেটা ক্লিনিক অথবা হাসপাতাল থেকে নিতে পারবেন।
- পিতা ও মাতা দুজনের বাংলা ও ইংরেজীতে করা ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধনের অনলাইন কপি প্রদান করতে হবে।
- পিতা ও মাতা দুজনের জাতীয় পরিচয় পত্র বা NID কার্ড ।
- বাসা বাড়ির হোল্ডিং নাম্বার এবং হোল্ডিং ট্যাক্স এর সন সহ রশিদ লাগবে।
৪৬ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত বাচ্চার জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে
- অনলাইনে আবেদন করা ফর্মের প্রিন্ট কপি।
- শিশুর সদ্য তোলা এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- বাংলাদেশ মেডিকেলের যে কোন চিকিৎসক কতৃক প্রত্যয়ন পত্রের সত্যায়িত কপি।
- পিতা ও মাতা দুজনের ডিজিটাল জন্ম সনদের ফটোকপি।
- বাবা ও মায়ের জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি।
- জমির দলিলের কর বা বিদ্যুৎ বিল বা যে কোন ট্যাক্স প্রদানের রশিদ।
- কাউন্সিলর থেকে দেয়া নাগরিকত্বের সনদ।
- আপনার ছোট বেলা টিকা প্রদানের কার্ডটি দরকার হবে।
৫ বছরের উপরের বাচ্চাদের জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে
- অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করা ফর্মের প্রিন্ট কপি।
- বাচ্চার সদ্য তোলা এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- পিতা- মাতার ডিজিটাল জন্ম সনদের ফটোকপি।
- বাবা- মায়ের জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি।
- বাচ্চা যদি (PSC, JSC, SSC, HSC) ইত্যাদির যে কোন পরীক্ষা দিয়ে থাকে তার সার্টিফিকেটের ফটোকপি সংযুক্ত করতে হবে।
- যদি কারো পিতা অথবা মাতা মৃত হয় তাহলে তাকে উক্ত ব্যক্তির মৃত্যুর সনদ প্রদান করতে হবে।
- চেয়ারম্যান অথবা কাউন্সিলর থেকে নেয়া প্রত্যয়ন পত্র।
নতুন জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে
- শিশুর জন্মস্থানের যাবতীয় তথ্য প্রয়োজন হবে।
- পিতা মাতার জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি।
- বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা।
- আবেদনকারীর েসম্পূর্ণ তথ্য।
শিশুর জন্ম নিবন্ধন আবেদন ফরম কোথায় পাবেন
জন্ম নিবন্ধন করতে কত টাকা ফি লাগে
- ৪৫ দিনের কম বয়সি বাচ্চাদের জন্য বিনা টাকায় জন্ম নিবন্ধন করতে পারবেন।
- ৪৬ দিন থেকে ৫ বছর বয়সি বাচ্চাদের জন্য জন্ম নিবন্ধন করতে মাত্র ২৫ টাকা লাগবে।
- আপনি আপনার মূল জন্ম নিবন্ধনের বাংলা এবং ইংরেজী কপি সম্পূর্ন ফ্রিতে পাবেন।
- তবে যদি আপনি আপনার মূল কপি হারিয়ে ফেলেন নকল তোলার জন্য ৫০ টাক প্রদান করতে হবে।
- জন্ম সনদ সংশোধন করার জন্য ফি লাগবে ১০০ টাকার মত।
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কি কি লাগে
- আবেদনকারীর ভুল জন্ম নিবন্ধন টি ( অনলাইনে যার তথ্য থাকবে )
- পিতা ও মাতার ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন ( অনলাইন কপি বাংলা ও ইংরেজী )
- বাচ্চা যদি ছোট হয় তাহলে টিকার কার্ড সাথে আনতে হবে। আর যদি বড় মানুষের ক্ষেত্রে হয় তাহলে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ সাথে নিয়ে আসতে হবে।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের ধাপ সমূহ
- আপনাকে প্রথমে জন্ম সনদ সংশোধনের জন্য http://bdris.gov.bd/br/correction এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। এখন আপনি লক্ষ করে দেখবেন যে জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের যে ঘর আছে সেখানে ক্লিক করতে হবে। সেখানে আপনার জন্ম সনদের ১৭ ডিজিটের নাম্বারটি প্রেরন করতে হবে। তবে বলে রাখি যদি আপনারা অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে চান তাহলে আপনার আগের জন্ম নিবন্ধনটি অবশ্যই অনলানে করা থাকতে হবে তা না হলে সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে না।
- এ ধাপে আপনাকে দেশের নাম সিলেক্ট করতে হবে, তারপর বিভাগ, জেলা, ইউনিয়ন ইত্যাদি ধাপে ধাপে সবগুলো অপশনে ক্লিক করলে আপনাকে পরের ধাপে নিয়ে আসা হবে।
- বর্তমান যে ধাপ এটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন কারন এখানেই জন্ম নিবন্ধনের বয়স সংশোধন অথবা জন্ম নিবন্ধনের নাম সংশোধন করার যে ফরম সেটা আপনার সামনে উন্মোচিত হবে। যেখানে আপনার নিজের নাম, বাবা- মায়ের নাম, জন্ম তারিখ, জাতীয়তা ইত্যাদির একটি পেজ ওপেন হবে। আপনি যেটা সংশোধন করতে চান তার উপর ক্লিক করলে সংশোধনের জন্য নতুন একটি ছক ওপেন হবে সেখানে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় সংশোধন টি করে নিতে পারেন। কারো যদি একাধিক বিষয় সংশোধনের দরকার পড়ে আপনি আরো তথ্য সংশোধন করুন বাটনে ক্লিক করে সেটাও ঠিক করে ফেলতে পারবেন।
- এভাবে যখন সকল কাজ শেষ হয়ে যাবে তখন আপনারা সংরক্ষন বাটনে চাপ দিয়ে সেটাকে সেভ করে রাখতে পারেন।
- জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে আপনাকে একটি ফি প্রদান করতে হবে। আপনি যদি অনলাইনে সে ফি আদায় করতে চান তাহলে ফি আদায় বাটনে ক্লিক করুন। যদি আপনি চালান জমা দিয়ে থাকেন তাহলে চালান নং, চালান জমা দেয়ার তারিখ, ব্যাংক, ব্রাঞ্চ ইত্যাদি তথ্য পুরন করে সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন যদি আপনার সকল তথ্য সঠিক থাকে তাহলে সকসেস লেখা উঠলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার কাজটি হয়ে গেছে।
- এরপর আবেদন পত্রটি প্রিন্ট করে আপনার নিকটস্ত কাউন্সিল অফিসে জমা দিবেন। তারা একটি সম্ভাব্য তারিখ দিবে সেদিন গিয়ে আপনি আপনার সংশোধিত জন্ম সনদটি তুলে আনতে পারবেন।
উপায় কী এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url