মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা।

আস্সালামু আলাইকুম। আশা করি এই মূহুর্তে আপনারা যারা আমাদের কন্টেন্টটি পড়ছেন সকলে আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। আজকে আমরা আপনাদের সামনে বহুল ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করবো। আমরা যারা মোবাইল ফোন ব্যবহার করছি তারা বুঝতে পারবো যে মোবাইলের কোন ব্যবহারের কারনে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে আর এটাও জানতে পারবো মোবাইল ব্যবহারের উল্লেখযোগ্য সুবিধাসমূহ। আমাদের গুগল নিউজ অনুসরন করতে পারেন।

মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ

 আজকের পেজ সূচিপত্রঃ

মোবাইল ফোন কি?

আজকাল মোবাইল ফোনের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার মত কোন অপশন নাই। কারন ছোট থেকে বড়, ধনি থেকে গরীব যে কোন পেশার মানুষ সবাই মোবাইলের সাথে পরিচিত। মোবাইল মূলত একটি ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস যা দ্বারা বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটা উন্নয়নের শিখরে পৌছে গেছে। মোবাইল আবিষ্কারের ফলে মানুষ অনেক অসাধ্যকে নিজের আওতায় নিয়ে আসছে। বর্তমানে মোবাইল মানুষের এতটা আপন হয়ে গেছে মানুষের আর তেমন বন্ধুর দরকার হয় না যদি একটা মোবাইল ফোন তার কাছে থাকে। আমরা বর্তমানে সকল ধরনের কাজে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেথাকি।

সাধারন মোবাইল ও স্মার্টফোনের তফাৎ সমূহ

  • সাধারন মোবাইলঃ এখানে সাধারন মোবাইল বলতে বাটন মোবাইল সেটগুলোকে বুঝানো হচ্ছে। বাটন মোবাইলগুলোতে কথা বলা যায়, SMS আদান প্রদান করা যায়, Mp3 এর গান শোনা যায়, Mp4 ফরমেটের ভিডিও দেখা যায়, এলার্ম দিয়ে রাখা যায়, সময় সেট করে রাখা যায় ইত্যাদি অনেক কাজ করা যায়।
  • স্মার্টফোনঃ আধুনিকতার আরেক নাম স্মার্টফোন। আমাদের বর্তমান এ সময়ে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে সকলের হাতে হাতে স্মার্টফোন। নিজেদের স্মার্ট করে গড়ে তোলার একটি গুরুত্বপূর্ন মাধ্যমই হলো স্মার্টফোন। স্মার্টফোন দ্বারা এমন কোন কাজ নেই যেটা করা যায় না। যেমন- কথাবলা, ভিডিও করা, ছবি তোলা, রেকর্ডিং করা, ভিডিও এডিট করা, গ্রফিক্স ডিজাইনের কাজ করা, ফটো ইডিট করা, কাউকে মেইল করা, ভিডিও কলে কথা বলা.গেম খেলা যায় (অফলাইন ও অনলাইন ভিত্তিক) প্রয়োজন মত এপস ইনস্টল করা ইত্যাদি। 

মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকসমূহ

সকল জিনিসের সুবিধা ও অসুবিধা আছে ঠিক তেমনি আজকে আমরা মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ নিয়ে আলোচনা করবো। তবে মোবাইল ব্যবহারের কিছু ক্ষতিকর দিক আছে আমরা এখন সে সম্পর্কে জানবো।
  1. অধিক পরিমানে মোবাইল ব্যবহার করলে আমাদের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে থাকে।
  2. সঠিক মাত্রার বেশি মোবাইল ব্যবহার করলে চোঁখের দৃষ্টির সমস্যা হয়ে থাকে। বিশেষ করে বর্তমান তরুন প্রজন্মের চোঁখের সমস্যা বিরাট আকারে ধারন করছে।
  3. মোবাইলের অধিক ব্যবহার মস্তিষ্কের সেলগুলোকে নষ্ট করে ‍দিয়ে থাকে। বিশেষ করে পর্ণগ্রাফি ভিডিওগুলো মানুষের মস্তিষ্কের সেলগুলোর কম্পন বাড়িয়ে দেয় এতেকরে  স্ট্রোকের সম্ভবনা বেড়ে যায়।
  4. মোবাইল ফোন পকেটে রাখার দরুন রেডিয়েশন নির্গত হয়ে আমাদের যৌনক্ষমতা নষ্ট করে তুলে।
  5. মোবাইলের অধিক ব্যবহার নিজেদের কে অনদের তুলনায় আলাদা করে তুলে।

মোবাইল ফোনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার

  1. যোগাযোগের মাধ্যমঃ আগের যুগে কেউ কারো খোঁজ নেওয়ার জন্য তার বাসায় জেত, অনেক দুরের পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হতো। কিন্তু মোবাইল আবিষ্কারের ফলে এখন নিমিষেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে কথা বলা যায়।
  2.  SMS প্রদানঃ মোবাইলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ন ব্যবহার হলো SMS সেবায়। অনেক সময় আমাদের জরুরি কাজে কাউকে কাজে লাগতে পারে কিন্তু সময় বিবেচনায় আমরা তাকে ফোন না করে SMS প্রদান করি। কারন সে ফ্রী হলে পরবর্তীতে আমাদের নক করবে।
  3.  Email সুজোগঃ যারা আমরা কারো কাছে কোন তথ্য প্রেরন করি তখন একটি গুরুত্বপূর্ণ এপস ব্যবহার করি সেটা হলো মেইল। আমরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে এ সুবিধা ভোগ করি। 
  4. এলার্ম সার্ভিসেঃ আমাদের যাদের প্রতিদিন রুটিন করে কাজ করতে হয় তাদের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা মোবাইলে এলার্ম দিয়ে রাখতে পারি। মোবাইল নির্ধারিত সময়ে আমদের উক্ত কাজের কথা স্বরন করিয়ে দিবে।
  5. ভিডিও এডিটিংঃ আমরা যারা অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ করি (যেমন- ফেসবুক, ইউটিউব ইত্যাদি) তাদের জন্য ভিডিও এডিট করে আপলোড করতে হয়। বর্তমানে স্মার্টফোনগুলো দিয়ে অনায়াসে এপস্ ব্যবহার করে এ কাজগুলো করা হয়।
  6. রেকোর্ডিং কজেঃ আমাদের কোন তথ্যের জন্য আমরা রেকোর্ড করে রাখি কথাগুলো। আর এটা মোবাইলে অটোমেটিক দেওয়াই থাকে। আমরা আমাদের প্রয়োজনে এটাকে ব্যবহার করে থাকি।
  7. লেখালেখির জন্যঃ আমরা যারা আগে কম্পিটারে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ব্যবহার করে লিখতাম, বর্তমানে স্মার্টফোনগুলো আমাদের এমন সুযোগ করে দিয়েছে আমাদের এখন কম্পিউটারে টাইপ করতে হয়ে না মোবাইলে টাইপ করা যায়।
এমন হাজারো কাজ বর্তমানে স্মার্টফোন ব্যবহারে আমরা খুব সহজে সম্পাদন করে থাকি, যা আমাদের সকলের অজানা নয়।

মোবাইল ফোনের সঠিক ব্যবহার

আমাদের ভিতরে অনেকে আছি যারা মোবাইল সঠিকভাবে ব্যবহার করতে জানি না। যেমন- কত বয়স থেকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা উচিত। কারা কারা মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবে। কখন মোবাইল ব্যবহার করলে আমাদের ক্ষতি হয় না ইত্যাদি। মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার করা মোটও উচিত নয়। কারন মোবাইলের ও নির্ধারিত সময় পর পর রেষ্টের দরকার হয়। আমরা যাদি মোবাইল ক্রমাগত ব্যবহার করতে থাকি তাহলে খুব তাড়াতাড়ি আমাদের মোবাইল নষ্ট হয়ে যাবে। আবার যেহেতু মোবাইল ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস তাই ফেলে রাখলেও চলবে না মোবাইল কম ব্যবহারের ফলেও তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়। তাই মোবাইলকে এমন ভাবে ব্যবহার করতে হবে যাতে করে আমাদের ক্ষতি না হয়। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠেই ফোন ব্যবহার করা উচিত নয়। মোবাইল ফোন অতিরিক্ত চোখের সামনে থেকে চাপ দেওয়াও উচিত নয়। মোবাইল বেশি সময় ধরে পকেটে রাখা উচিত নয়। রাতে ঘুমাতে গেলে বালিশের পাশে মোবাইল রাখা উচিত নয়। অনেকে মোবাইল কমোরে বেধে রাখে এতে তার কমর ব্যাথা হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যাবে। রাতে ঘুমানোর কমপক্ষে ১ ঘন্টা আগে মোবাইল ফোন পরিচালনা থেকে বিরত থাকা উচিত কারন এতে করে মস্তিষ্ক ঘুমানোর জন্য মানসিকভাবে তৈরি হয়।

মোবাইল ফোন ব্যবহারের উপকারিতা

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় হলো মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা এরই ধারাবাহিকতায় এখন আপনাদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুবিধা বা উপকার সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
  • সহজে কথা বলা যায় এতে করে কারো সাথে কথা বলতে মন চাইলেই সাথে সাথে কথা বলা যায়।
  • কোন কিছু টাইপ করে লিখে প্রেরন করা যায় এতে করে আগেরমত ডাকপিয়ন দরকার হয় না চিঠি আদান প্রদানের জন্য।
  • তথ্যের নিরাপদ আদান প্রদান, আমরা যারা মোবাইলে কথা বলে থাকি মাঝে মাঝে আমরা এমন গুরুত্বপূর্ন কথা মোবাইলে বলি যা খুবই সিকিউর, তারপরও আমরা বলি কারন অমাদের তথ্যের নিরাপত্তা রয়েছে। সিম কোম্পানি যাকে তাকে আমাদের কোন তথ্য প্রদান করবে না।
  • মোবাইল ফোন আবিষ্কারের ফলে আত্নিয় স্বজনের সাথে খুব সহজে যোগাযোগ করা যায়। কেউ বিপদে পড়লে সহজে গিয়ে সহযোগীতা করা যায়।
  • বর্তমান ডিজিটাল যুগ হওয়ার কারনে আমরা মোবাইল ব্যবহার করে অর্থ উপার্জন করতে পারি। সেটা যদিও অনেক উপায়ে হয়ে থাকে। যেমন- মোবাইলে রিচার্জ করে, অনলাইন মার্কেটিং করে, ফেসবুক মার্কেটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং এ সকল কাজ আমরা বর্তমানে মোবাইল ‍দিয়ে করে ফেলতে পারি।
  • বিপদে অনেক সহায়তা করে, যদি হঠাৎ কেউ অসুস্থ হয়ে যায় মোবাইলের মাধ্যমে আমরা বড় বড় ডাক্তারের সহায়তায় তাকে সুস্থ্য করে তুলতে পারি।
  • আগুন লাগলে, পুলিশি সহায়তার দরকার হলে আমরা মোবাইল ব্যবহার করে থাকি।

মোবাইল ফোন ব্যবহারের অপকারিতা

  • মোবাইল ব্যবহারে অপরাধের প্রবনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে সমাজে কিশোর যারা আছে তাদের একটি সংঘবদ্ধ চক্র মোবাইলের ব্যবহার ক্ষতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
  • বাচ্চা ছেলে/মেয়ে যারা আছে তারা মোবাইলের কার্টুন/বিভিন্ন এনিমেশন ভিডিও দেখে সময় আপচয় করছে,এতেকরে তাদের পড়াশোনা কম হচ্ছে।
  • বিভিন্ন প্রকার গেমের পিছনে অনেকে অযথা অনেক সময় নষ্ট করছে, এতেকরে ভবিষ্যতে ভালো মেধাবি ছাত্র/ছাত্রী কমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
  • মোবাইলের ভেতরথেকে তেজষ্ক্রিয় রশ্নি নির্গত হয়, যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
  • মোবাইল আবিষ্কারের পরে মানুষের মিথ্যা কথা বলার হার অনেক বেড়ে গেছে, এতেকরে মানুষ অহরহ ধোকাবাজির ভিতরে পড়ছে।
  • অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন রকমের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
  • মানুষের গোপন ভিডিও ধারন করে জোর করে অনেক টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
  • পর্নগ্রাফির মত ভিডিওগুলো মানুষের এখন হাতের নাগালে চলে আসছে এতেকরে অনেকে চরিত্রহীন হয়ে পড়ছে।

মোবাইল ফোন আমাদের জন্য আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ

বিজ্ঞানের সকল আবিষ্কার আমদের জন্য অনেক বড় বড় বিপ্লব নিয়ে আসছে। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থাকে অনেক আধুনিক করে তুলেছে। আমরা বিজ্ঞানের আবিষ্কারের কারনে বর্তমানে এত সুবিধা ভোগ করে আসছি। তবে সবকিছুর কিছু ক্ষতিকর দিকও আছে, মুলত কোন জিনিসের উপকার বা অপকার এটা নির্ভর করে ব্যবহারকারীর উপর। কোন কিছুকে যদি আমরা পজিটিভ ভাবে নিয়ে কাজ করতে পারি তাহলে অবশ্যই সেটা আমাদের উপকারেই আসবে। ঠিক তেমন মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ নিয়ে যে আলোচনা করা হলো সেখান থেকে আমরা অবশ্যই অনেক কিছু জানতে পেরেছি। যদিও কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে তারপরও মোবাইল আবিষ্কারে আমাদের এত বেশি উপকার হয়েছে যে আমরা এটা বলতে পারি মোবাইল আমাদের জন্য আশীর্বাদ।

মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর দিকথেকে বাঁচার উপায়

আমরা পুরো আর্টিকেল জুড়ে আলোচনা করলাম মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ নিয়ে যদিও সুবিধা বেশি ক্ষতিকর প্রভাবও কিছুটা রয়েছে যেটা  আলোচনা করা হয়েছে। এখন আমরা কিভাবে এ ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারি এ সম্পর্কে একটু ধারনা নেই।
  • অতিরিক্ত ফোন ব্যবহার পরিত্যাগ করতে হবে, কোন একটা কাজের সাথে সংযুক্ত থাকুন এতে করে ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে মুক্তি পাবেন।
  • মোবাইল ফোন রাতে শোয়ার সময় বালিশের পাশে না রেখে একটু দুরে রাখুন। এতেকরে মোবাইলের ক্ষতিকর রশ্নি আপনার তেমন ক্ষতি করতে পারবে না।
  • মোবাইলের জন্য আলাদা করে একটি ব্যাগ ব্যবহার করা উচিত এতে করে যৌন ক্ষমতা হ্রাস হওয়ার সম্ভবনা কমে যাবে।
  • ক্ষতিকর গেম খেলা থেকে বিরত থাকতে হবে। 
  • মন খারাপ থাকলে ফোন ব্যবহার না করে কোথাও থেকে ঘুরে আসতে পারেন এতে করে মোবাইলের ব্যবহার ও কমবে সাথে সাথে আপনার মনটাও ভালো হয়ে যাবে।
মোবাইল ফোন নিয়ে যে এত আলোচনা করা হলো আশাকরি আপনি বুঝতে সক্ষম হয়েছেন আপনার বর্তমান কি করা উচিত। যতটা সম্ভব মোবাইল ব্যবহার কম করুন কারন যিনি মোবাইল আবিষ্কার করেছেন ড. কুপার তিনি নিজে বলেছেন অতিরিক্ত মোবাইলের ব্যবহার মোটেও উচিত নয়। তাই মোবাইল ব্যবহারে সতর্ক হোন। আজকের মত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ করছি কারো যদি কোন মতামত থাকে অবশ্যই কমেন্ট করে যানাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

উপায় কী এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url