সোলার প্যানেল বসানোর নিয়ম | সোলার প্যানেলের দাম ২০২৪
সোলার প্যানেল বসানোর নিয়ম- বাংলাদেশে বিদ্যুতের এখনো যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে এটা সকলের জানা। যদিও সরকার বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য অনেক কাজ করে যাচ্ছে। তারপরও যেহেতু বিদ্যুতের ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে তাই বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে অনেকে অনেক পথ খুঁজে।
বিশেষ করে যারা গহীন গ্রামে বসবাস করে তাদের বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌছালেও বিদ্যুৎ না থাকার হারটাই বেশি। তাই চর এলাকার লোকজন বিকল্প পন্থা হিসেবে সোলার প্যানেল কে পছন্দ করে। বাংলাদেশের শহর এবং গ্রামে বর্তমানে সোলার প্যানেলের ব্যবহার অনেক বেশি মাত্রায় লক্ষ করা যাচ্ছে।
অনেকে বাজার থেকে সোলার প্যানেল কিনে আনে কিন্তু কিভাবে সেটা বসাতে হবে এ সম্পর্কে ধারনা অনেকের নেই। তাই আজকের পোস্টে সোলার প্যানেল বসানোর নিয়ম নিয়ে আলোচনা করবো। আশা করি পোস্ট পড়ে সোলার প্যানেল আপনি নিজেই স্থাপন করতে পারবেন।
সোলার প্যানেল কি
পৃথিবীর সকল শক্তির উৎস হলো সূর্য। পৃথিবীতে যত শক্তি আছে তার সবকিছুই কোন না কোন ভাবে সূর্য থেকে পাওয়া। সেই সূর্য শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সোলার প্যানেলে কাজ করানো হয়ে থাকে। মূলত সোলার প্যানেল সূর্য থেকে আলো সংগ্রহ করে এবং এই আলোক শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রুপান্তর করে থাকে।
আমরা সেই বিদ্যুৎ দিয়ে বাসাবাড়িতে বাতি, পাখা, টেলিভিশন সহ অন্যান্য ইলেকট্রিক্যাল অ্যাপলায়েন্স পরিচালনা করতে পারি।
এককথায় সোলার প্যানেল বলতে বুঝায় এটা এমন একটি যন্ত্র যা সৌর শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপন্ন করে। অনেকগুলো সোলার সেল একত্রে সংযুক্ত করে সোলার প্যানেল তৈরি করা হয়। সোলার প্যানেলে ফটোভোল্টাইক সেল ব্যবহার করে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদনের কাজ করা হয়ে থাকে।
সোলার প্যানেল বসানোর নিয়ম
সোলার প্যানেল বসানোর জন্য আপনাকে কয়েটি বিষয়ের উপর নজর দিতে হবে। আপনি যেখানে সোলার প্যানেল বসাবেন সেখানে যেন সবসময় রোদ পায় এমন যায়গাকে নির্বাচন করতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনি বাসার ছাদে যদি স্থাপন করেন তাহলে কিন্তু সবসময় আলো পাবে। বাসার উপর বড় গাছ থাকে তাহলে সেখানে না স্থাপন করাটাই উত্তম।
কারন ছায়া থাকলে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করতে পারবে না সোলার প্যানেল। আমরা কয়েকটি ধাপ অবলম্বন করার মাধ্যমে আমরা নিজেরাই সোলার প্যানেল স্থাপন করতে পারি-
- প্রথমে রোদ থাকে সবসময় এমন জায়গা নির্বাচন করতে হবে।
- সোলার প্যানেল বসানোর জন্য ফ্রেম বানাতে হবে।
- সোলার প্যানেল দালানের ছাঁদে অথবা ঘরের চালের আনুভূমিকের সাথে ২৩ ডিগ্রি কোণে স্থাপন করতে হবে, যাতে করে সরাসরি সূর্যের আলো সোলার প্যানেলে পড়ে।
- সোলার প্যানেলের তারদুটিকে নিচ দিয়ে সোলার প্যানেল থেকে চার্জ কন্ট্রোলারে নিয়ে যেতে হবে।
- পরবর্তীতে চার্জ কন্ট্রোলার থেকে ব্যাটারিতে লাইন নিয়ে যেতে হবে।
- চার্জ কন্ট্রোলারের যে পয়েন্টগুলোতে লোড সংযোগের পয়েন্ট আছে সেখানে থেকে লোডে বিদ্যুৎ সরবারহ দিতে হবে।
সোলার প্যানেল কিভাবে কাজ করে
সূর্য থেকে যে শক্তি আমরা পেয়ে থাকি তাকে সৌরশক্তি বলে। বাংলাদেশের যে আবহাওয়া জনিত অবস্থা তার জন্য সৌরশক্তি ব্যবহারের সুযোগ ও সুবিধা অনেক বেশি। আধুনিক যুগে কিছু কৌশল ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে সৌর কোষ।
এই কোষ বা সেলগুলো মূলত সেমিকন্ডাক্টর সিলিকন দিয়ে তৈরি আলোক সংবেদী পি-এন জাংশন। অনেগুলো সৌর কোষ বা সেলের সমন্বয়ে গঠিত হয় সোলার প্যানেল। আর আমাদের সোলার প্যানেল থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ এর সঞ্চয় ও ব্যবহারের পদ্ধতিকে মূলত সোলার সিস্টেম।
সোলার সিস্টেমে ব্যবহৃত সোলার প্যানেল ফটো ভোল্টায়িক এনার্জি রুপান্তর পক্রিয়ায় কাজ করে থাকে। সোলার এনার্জি সোলার সেলের মাধ্যমে ডাইরেক্ট কারেন্ট (ডিসি) উৎপন্ন করে থাকে। অনেকে প্রশ্ন করে সোলার প্যানেলের উৎপন্ন ভোল্টেজ এসি নাকি ডিসি? আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন সোলার প্যানেলে উৎপন্ন বিদ্যুৎ ডিসি বা ডাইরেক্ট কারেন্ট।
সৌর কোষ বলতে কি বুঝায়
যে ব্যবস্থায় কোন পি এন জাংশনের উপর আলো ফেলে আলোক শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর করা হয়, তাকেই মূলত সৌর কোষ বা সেল বলা হয়। চ্যাপিন, ফুলার ও আরো কয়েকজন মিলে ১৯৫৪ সালে সিলিকন পি এন জাংশন ব্যবহার করে সর্বপ্রথম সৌর সেলের আবিষ্কার করেন। আলোর যে শক্তি এটা আলোর তীব্রতা ও আলোকিত স্থানের ক্ষেত্রফলের উপর নির্ভর করে থাকে।
সোলার সেল সূর্যের আলোতে রাখার ফলে ফটো ভোল্টেজ উৎপন্ন হয়। প্রতিটি সেলে ০.৫ ভোল্ট থেকে ১.০ ভোল্ট উৎপন্ন হয়। এ ভোল্টেজ অবশ্যই ডিসি ভোল্টেজ। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেলকে সিরিজে সংযোগ করে ভোল্টেজ বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেলকে প্যারালালে সংযোগ করে কারেন্ট বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে।
সোলার সিস্টেমে ব্যবহৃত সরঞ্জামের তালিকা
সোলার প্যানেলে যে সকল প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বা মালামাল দরকার হয় সেগুলো হলো-
- সোলার প্যানেল
- চার্জ কন্ট্রোলার
- ব্যাটারি
- লোড ইত্যাদি
সোলার প্যানেলঃ সোলার প্যানেল মূলত সৌর শক্তি থেকে থেকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রুপান্তরের প্রধান উপকরন। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সৌর কোষ তৈরি করা হয়েছে। সোলার প্যানেলের মূল কাজ হলো সূর্য শক্তি থেকে আলো নিয়ে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপন্ন করা।
চার্জ কন্ট্রোলারঃ চার্জ কন্ট্রোলার দিয়ে পুরো সিস্টেমটাকে নিয়ন্ত্রন করা হয়ে থাকে। যেমন সোলার প্যানেল থেকে চার্জকে ব্যাটারিতে জমা করা এবং পরবতীতে তা লোডে সরবারহ করা। চার্জ কন্ট্রোলার ব্যাটারির জীবনকাল সংরক্ষনে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে থাকে।
ব্যাটারিঃ ব্যাটারি হলো চার্জের ধরে রাখার একটি জায়গা। তবে ব্যাটারি হিসাবে সচরাচর লিড লিড এসিড সেল ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
লোডঃ আমাদের সোলার সিস্টেম ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য হলো ব্যবহৃত লোডগুলোকে পরিচালনা করা এ কাজে আমরা, বাতি, পাখা, কম্পিউটার, মোবাইল, ক্যালকুলেটর, ঘড়ি, টেপ রেকোর্ডার, ফোন ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
সোলার প্যানেলের দাম ২০২৪
সোলার প্যানেলের দাম নির্ভর করে ওয়াটের উপর। বাজারে ৩৫ টাকা থেকে শুরু করে ৮৫ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন কোম্পানির সোলার প্যানেল পাওয়া যায়। মনোক্রিস্টালাইনের জন্য প্রতি ওয়াট ৭০ থেকে ৯০ টাক হতে পারে। আর পলিক্রিস্টালাইনের জন্য প্রতি ওয়াটের দাম পড়বে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা।
যদি আমরা ৭৫ টাকা ধরে নেই পাওয়ার কোম্পানির সোলার প্যানেলের ওয়াট ভিত্তিক দাম তাহলে আমাদের ২০ ওয়াটের সোলার প্যানেলের দাম হবে ১৫০০ টাক। ৭৫ টাকা হিসাব ধরে মূলত নিচের ওয়াটগুলোর দাম নির্ধারন করা হয়েছে। কারো যদি বাজেট কম থাকে তারাও কিন্তু সোলার প্যানেল কিনতে পারবেন।
কারন বাজারে নানা ধরনের কোম্পানি বিভিন্ন দামে সোলার প্যানেলগুলো বিক্রি করে থাকে। তবে একটু দাম বেশি দিয়ে কেনার চেষ্টা করবেন তাহলে সোলার প্যানেল থেকে প্রাপ্ত ভোল্টেজের পরিমান অনেক ভালো থাকবে।
- ২০ ওয়াট সোলার প্যানেলের দাম ১৫০০ টাকা
- ১০০ ওয়াট সোলার প্যানেলের দাম ৭৫০০ টাকা।
- ১৫০ ওয়াট সোলার প্যানেলের দাম ১১২৫০ টাকা।
- ১০০০ ওয়াট সোলার প্যানেলের দাম ৭৫,০০০ টাকা
যখন সোলার প্যানেল কিনতে যাবেন কয়েকটি দোকান চেক করে নিবেন, তাহলে ভালো জিনিস চিনে কিনতে পারবেন। আবার দাম সম্পর্কেও ভালো একটি ধারনা পাবেন।
সোলার প্যানেল এর উপকারিতা
আমাদের বর্তমানে যতপ্রকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা আছে তার ভিতরে অনান্য পদ্ধতির হিসেবে সোলার সিস্টেমের সুবিধা অনেক ভালো। নিচে সোলার প্যানেলের উপকারিতা গুলো আলোচনা করা হলো-
- বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভবনা অনেক কম তাই এটা বেশি নিরাপদ।
- বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় নেই বললেই চলে, প্রাথমিক বিনিয়োগে যতটুকু খরচ হয় ততটুকু।
- পরিচালনা ও রক্ষনাবেক্ষন খরচ অনেক কম।
- স্থাপন পদ্ধতি খুবই সহজ।
- প্রয়োজনে সম্প্রোসারণ করা যায় নিজের ইচ্ছেমত।
- এক জায়গা থেকে অন্যযায়গায় স্থানান্তর খুব সহজে করা যায়।
- যেহেতু কোন শব্দ নেই, গন্ধ নেই তাই পরিবেশ দুষণ হওয়ার কোন সম্ভবনা নাই।
- কোন প্রকার জ্বালানী খরচ নেই, সহজে নষ্ট হয় না, কোন প্রকারের বিদ্যুৎ বিলের ঝামেলা নেই এবং স্থাপন খরচও তুলনামূলক অনেক কম।
- লোডের অতি কাছাকাছি স্থাপন করা যায় বলে পাওয়ার পরিবহন খরচ হয় না।
- আবহাওয়া যদি ভালো থাকে তাহলে এনার্জি পেতে কোন সমস্যার সম্মুখিন হতে হয় না।
- যদি বায়ুমন্ডলের অবস্থা স্বাভাবিক থাকে তাহলে চিরস্থায়ী এনার্জি সুবিধা বিরাজমান।
সোলার প্যানেল এর অসুবিধা
সোলার প্যানেলের অনেক অনেক সুবিধা থাকলেও কিছুটা অসুবিধাও পরিলক্ষিত হয়। সোলার প্যানেল স্থাপনে যে সকল অসুবিধা হয় সেগুলো আলোচনা করা হলো-
- যে পরিমান শক্তির রুপান্তর বা সঞ্চয় করতে চাই বাস্তবে তেমনটা সম্ভব হয় না।
- প্রাথমিক খরচের পরিমান অনেক বেশি।
- আবহাওয়া জনিত কারনে সূর্যের অনুপস্থিতে সঠিক এনার্জি উৎপাদন করা সম্ভব হয় না।
- রাতের বেলায় সূর্যের আলো না থাকায় এনার্জি উৎপান করা যায় না।
- ঋতুর কমবেশিতে সূর্যের আলো কম বেশি হওয়ায় সবসময় ভালো ভোল্টেজ উৎপাদন করা সম্ভব হয় না।
সোলার প্যানেল কানেকশন
শেষকথা
আপনাদের উদ্দেশ্যে বলে রাখি বর্তমান সকল জিনিসের দাম বেশি হওয়ায় অবশ্যই যাচাই করে কিনবেন সোলার প্যানেল। তাহলে যত ওয়াটের সোলার প্যানেল কিনেন না কেন আপনার জিতার চান্জ বেশি থাকবে।
আশা করি আজকের পোস্ট আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। যদি সোলার প্যানেল বসানোর নিয়ম নিয়ে কোন প্রকারের প্রশ্ন থাকে আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। আর পোস্ট পড়ে উপকৃত হলে উপায় কী ওয়েবসাইট সবসময় ভিজিট করার অনুরোধ করছি। ধন্যবাদ।
আরো পড়ুনঃ
উপায় কী এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url