মেগারের গঠন ও কার্যপ্রণালী | মেগার কি

মেগারের গঠন ও কার্যপ্রণালী- মেগার যন্ত্রপাতির ত্রুটি এবং বৈদ্যুতিক স্থাপনার পরীক্ষা করার গুরুত্বপূর্ণ  যন্ত্র বা মিটার। আমরা আজকে আপনাদের সাথে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ বহুল ব্যবহৃত মেগারের গঠন ও কার্যপ্রণালী নিয়ে আলোচনা করবো। পুরো পোস্ট পড়লে আপনারা মেগার সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা পেয়ে যাবেন।

মেগার ১৮৮৯ সালে প্রথম ব্যবহার করা শুরু হলেও ১৯২০ সালের পর থেকে মেগারের ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা ব্যপক হারে বাড়তে শুরু করে। বহুল ব্যবহারের কারনে বর্তমানে অনেক কম্পানি আরো সহজ পরিচালনা পদ্ধতি দিয়ে নতুন নতুন মেগার বাজারজাত করে চলছে, যা মেগারের ব্যবহারকে আরো আধুনিক ও সহজ করে তুলছে।

আরো পড়ুনঃ আর্থিং করার পদ্ধতি ও আর্থিং কেন ব্যবহার করা হয়।

মেগার কি

মেগার হলো এমন একটি যন্ত্র যার সাহায্যে উচ্চমানের রেজিস্ট্যান্সকে মেগাওহম স্কেলে পরিমাপ করা হয়। মেগাওহমে অতিউচ্চ মানের রেজিস্ট্যান্স মাপা যায় বলে এ যন্ত্রকে মেগার বলে ডাকা হয়। মেগারকে অনেকে ইনসুলেশন টেস্টিং মেগার বলে কারন এর সাহায্যে বৈদ্যুতিক স্থাপনায় তারের ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করা হয়। মেগার মিটার এর কাজ কি এটা যারা জানতে চান আশা করি তাদের উত্তর পেয়েছেন।

মেগার কত প্রকার ও কি কি

ব্যবহারিক ক্ষেত্রের উপর ভিত্তিকরে মেগার দুই প্রকার। যথা-
  • ম্যানুয়াল মেগার
  • ইলেকট্রনিক মেগার বা ডিজিটাল মেগার
ম্যানুয়াল মেগারঃ ম্যানুয়াল মেগারে একটি ডিসি জেনারেটর এবং একটি ওহম মিটার থাকে। ম্যানুয়াল মেগারে যে জেনারেটর থাকে তা সম্পূর্ণ হস্তচালিত। তাছাড়াও ম্যানুয়াল মেগারে একটি ক্লাচের ব্যবস্থা থাকে যার যাহায্যে হস্তচালিত জেনারেটরটি নির্ধারিত টেস্টিং কারেন্ট উৎপন্ন করতে পারে। 

ম্যানুয়াল মেগারে ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করার জন্য দুটি আলাদা প্রোব বা নব এর ব্যবস্থা থাকে। ম্যানুয়াল মেগার অনেক প্রাচীন বিধায় এর ডিসপ্লে এনালগ সিস্টেমের। এ মেগার পরিচালনার জন্য বাহিরের থেকে কোন পাওয়ার সাপ্লাইয়ের কোন প্রয়োজন হয় না। দামে সস্তা বিধায় বেশিরভাগ স্থানে ম্যানুয়াল মেগার ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

ম্যানুয়াল মেগার ও ইলেকট্রনিক মেগার

ইলেকট্রনিক মেগারঃ ইলেকট্রনিক মেগার মূলত ব্যাটারী দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। ইলেকট্রনিক মেগারে একটি ওহম মিটার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ইলেকট্রনিক মেগার এনালগ ও ডিজিটাল দুই ধরনের হয়ে থাকে। তবে বর্তমানে ইলেকট্রনিক মেগার হিসাবে ডিজিটাল মেগারকে বেশি ব্যবহার করা হয়।

ইলেকট্রনিক মেগারে দুইটি আলাদা প্রোব বা নব থাকে যার সাহায্যে ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করা হয়ে থাকে। ইলেকট্রনিক মেগারে আরেকটি সিলেক্টর নব থাকে যার সাহায্যে বিভিন্ন রেঞ্জ সিলেক্ট করার ব্যবস্থা থাকে। বর্তমানে কিছু মেগার আছে যেখানে অটো সিলেক্টর নব থাকে, অটো সিলেক্ট যে সকল মেগারে থাকে সেখানে সিলেক্ট নবের কোন অপশন থাকে না। তবে ইলেকট্রনিক মেগারে একটি পুশ বাটন সুইচ থাকে। যা মেগারের মধ্যে টেস্ট নামে লেখা থাকে। এই টেস্ট বাটনে চাপ দিয়ে মূলত পাঠ নেওয়া হয়ে থাকে।


ইলেকট্রনিক মেগারের সুবিধা হলো ভালো অ্যাকুরিসি, বেশিরভাগ ডিজিটাল ডিসপ্লে তাই মান পড়তে সুবিধা হয়। যে কোন ব্যাক্তি খুব সহজে ইলেকট্রনিক মেগার ব্যবহার করতে পারবে। যে কোন স্থানে বহন করার জন্য ইলেকট্রনিক মেগার খুবই ভালো। তবে ইলেকট্রনিক মেগারের দাম ম্যানুয়াল মেগারের তুলনায় কিছুটা বেশি।

মেগারের গঠন ও কার্যপ্রণালী

আমরা এখন বহুল ব্যবহৃত মেগারের গঠন ও কার্যপ্রণালী নিয়ে কথা বলবো। মেগারে ওহম মিটার থাকে যার দ্বারা বড় মানের রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স পরিমাপে মেগার বেশি ব্যবহার করা হয়। তাই মেগারকে ওহম মিটারের বড় ভাই বলেও জানে অনেকে।

মেগার কি কি নিয়ে গঠিত

মেগার ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ গুরুত্বপূর্ণ মেজারিং ডিভাইস। যার দ্বারা সর্বনিম্ন ০.৫ মেগাওহম থেকে সর্বোচ্চ ১ মেগাওহম রেজিস্ট্যান্স সঠিকভাবে পরিমাপ করা হয়। 
  • মেগারে রয়েছে হস্তচালিত ডিসি জেনারেটর
  • মেগারে একটি পারমানেন্ট ম্যাগনেট মুভিং কয়েল রয়েছে যা (PMMC) নামে পরিচিত।
  • মেগারে রয়েছে তিনটি টার্মিনাল- (ক) লাইন টার্মিনাল (খ) আর্থ টর্মিনাল (গ) গার্ড টার্মিনাল

মেগারের কার্যপ্রণালী

মেগারের গঠন ও কার্যপ্রণালী

মেগারে রয়েছে একটি পারমানেন্ট ম্যাগনেট মুভিং কয়েল টাইপ যন্ত্রাংশ, যেখানে স্থায়ী চুম্বকের পোল পিসগুলো বাহিরের দিকে একটু বর্ধিত করা থাকে। মাঝের মূল আয়রন কোরটি একটি বিশেষ আকৃতির তৈরি। মেগারের কারেন্ট কয়েল ডিফ্লেকটিং কয়েল হিসাবে, খানিকটা বাইরের দিকে একজোড়া ভোল্টেজের কয়েল যার একটি নরমাল কয়েল হিসাবে কাজ করে অন্যটি কমপেনসেটিং কয়েল হিসাবে কাজ করে থাকে।

ভোল্টেজ কয়েল ও ডিফ্লেকটিং কয়েল হিসাবে ব্যবহৃত কন্ট্রোলিং একে অপরের সাথে সমকোণে থাকে। ভোল্টেজ কয়েল এবং ডিফ্লেকটিং কয়েল দুটি পারমানেন্ট ম্যাগনেটের ফিল্ডের মাঝে মুক্তভাবে ঘুরতে পারে। উপরের দুটি কয়েল মেগারের মাঝে অবস্থিত হস্ত চালিত ডিসি জেনারেটরের সাথে প্যারালালে সংযুক্ত থাকে। 

মেগারের জেনারেটিং ভোল্টেজ ৫০০ ভোল্ট অথবা ১০০০ ভোল্ট হয়ে থাকে। মেগার মূলত এই জেনারেটর হতে সরবারহ ভোল্টেজ পেয়ে থাকে। ভোল্টেজ কয়েলের নিয়ন্ত্রন কয়েলের অংশ ভিতরে এবং কমপেনসেটিং কয়েলের অংশ বাহিরে অবস্থান করে। যা একে অপরের সাথে সিরিজে সংযুক্ত থাকে।


মেগারের লাইন টার্মিনাল এবং আর্থ টার্মিনালের মধ্যে পরিমাপকৃত রেজিস্ট্যান্সকে সংযোগ করে মেগারের হাতল ঘুরানোর ফলে জেনারেটরে উৎপন্ন ভোল্টেজের প্রভাবে ডিফ্লেকটিং কয়েলে ও কন্ট্রোলিং কয়েল সার্কিটে কারেন্ট দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে, যার ফলে মিটার পাঠ বা রিডিং দেয়। 

এ সময় শুধু প্রেসার কয়েলের মধ্য দিয়ে কারেন্ট সরবারহ হবে এবং পারমানেন্ট ম্যাগনেট এর সঙ্গে ক্রিয়ার কারনে পয়েন্টারটি বামার্তে ঘুরে ইনফিনিটি দেখাবে। আর যদি মেগারের টেস্ট টার্মিনাল দুইটি (L) ও (E) শর্ট করে দেই তাহলে কারেন্ট কয়েলের ভিতরে বেশি মাত্রায় কারেন্ট প্রবাহিত হবে। এ সময় স্থায়ী চুম্বকের সথে ক্রিয়ার ফলে মেগারের পয়েন্টারটি ডানপাশে ঘুরে শূন্য (০) মান দেখাবে।

এভাবেই মূলত মেগারের সাহায্যে উচ্চমানের রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করা হয়ে থাকে।

মেগার ব্যবহার করা হয় কেন

মেগারের ব্যবহার বৈদ্যুতিক কাজে অনেক জায়গায় প্রয়োগ করা হলেও নিচে উল্লেখিত ক্ষেত্রগুলোতে বেশি ব্যবহার করা হয় মেগারকে-
  • কোন বৈদ্যুতিক বর্তনীর শট সার্কিট ও ওপেন সার্কিট জনিত ত্রুটি নির্ণয় করতে মেগার ব্যবহার করা হয়।
  • বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং এ ব্যবহৃত ক্যবলের ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স চেক করার জন্য মেগার ব্যবহার করা হয়।
  • বিভিন্ন সার্কিট ব্রেকার চেক করার জন্য মেগার ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
  • বাতাসের আদ্রতা, তাপ, চাপ এবং ধুলাবালির কারনে ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রাংশগুলোর ইনসুলেশন ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যেতে পারে। তাই বৃহৎ দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ইনসুলেশন চেক করতে মেগার ব্যবহার করা হয়।
  • বৈদ্যুতিক মোটর, জেনারেটর ও ট্রান্সফরমারের ওয়াইন্ডিং এর ইনসুলেশন লেভেল চেক করতে মেগার ব্যবহার করা হয়।
  • ইনসুলেটিং এর জন্য যে তেল ব্যবহার করা হয়, তেলের ইনসুলেশন লেভেল চেক করতেও মেগার ব্যবহার করা হয়।
  • তার অথবা ক্যাবলের নিরবিচ্ছিন্নতা চেক করার জন্যও মেগার ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
  • সুইচের পোলারিটি চেক করতে মেগার ব্যবহার করা হয়।
  • বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং এর কন্টিনিউটি চেক করতেও মেগার ব্যবহার করা যায়।

ভালো/খারাপ মেগার চিহ্নিত করন

ব্যবহারিক ক্ষেত্রে অনেকসময় দেখা যায় মেগার আছে ঠিকই কিন্তু মেগারটি ভালো নাকি খারাপ তা আমরা বুঝতে পারি না। একটি মেগার ভালো না খারাপ তা নিচের দুইটি বিষয় লক্ষ করলে বুঝতে পারবেন-
  • কোন ক্যাবল বা তারের দুই প্রান্ত যদি মেগারের প্রান্তগুলোর সাথে সংযুক্ত করে মেগারের হাতল ঘুরানো হয় তখন যদি মিটারে শূন্য পাঠ দেখায় তাহলে বুঝা যাবে তারের কন্টিনিউটি সঠিক আছে।
  • আর যদি কোন তারকে মেগারে সংযুক্ত করার পরে হাতল ঘুরানোর পরে যখন মিটারের পাঠ ইনফিনিটি বা অসীম দেখায় তখন বুঝা যাবে মেগারে সংযুক্ত তারটির কোথাও না কোথাও ছেড়া আছে।
আর যখন দেখবেন আপনি মেগারের হাতল ঘুরাচ্ছেন ঠিকই কিন্তু মিটার কোন পাঠ দেয় না, তখন বুঝতে হবে আমাদের মেগারটি নষ্ট।

মেগারের সাহায্যে রেজিস্ট্যান্স মাপার পদ্ধতি

আপনাকে মেগারের সাহায্যে রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করতে হলে প্রথমে যার রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করবো সেটাকে L ও E টার্মিনালের সাথে সংযোগ করে দিতে হবে। তারপর মেগারের হাতলটি মুক্তভাবে ঘুরাতে হবে। ঘুরানো অবস্থায় অবশ্যই মেগারের স্কেল বরাবর পয়েন্টারের অবস্থান দেখে পাঠ গ্রহন করতে হবে। এভাবেই মূলত রেজিস্ট্যন্স পরিমাপ করা হয়ে থাকে।

যখন মেগারের হাতল ঘুরাবেন এমনভাবে ঘুরাতে হবে যাতে করে হাতলটি মুক্তভাবে ঘুরতে পারে। যখন হাতল মুক্তভাবে ঘুরতে পারে তখনই মূলত নির্দিষ্ট ভোল্টেজ তৈরি হয়। মেগারের মাধ্যমে ০.৫ মেগাওহম এর কম রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করলে সঠিক মান পওয়া যায় না।

শেষকথাঃ

আমরা আজকে মেগারের গঠন ও কার্যপ্রণালী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। আশাকরি পুরো পোস্ট আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। পুরো পোস্ট পড়ে মেগার মিটারের কাজ কি তা সম্পর্কে সকলের ধারনা আশ করি ক্লিয়ার হয়েছে। আপনাদের যদি আমাদের পোস্ট ভালো লাগে আমাদের কমেন্ট করে উৎসাহিত করুন। 

মেগারের গঠন ও কার্যপ্রণালী নিয়ে প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদের জানাতে পারেন।সবসময় নিত্যনতুন পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। সকলের মঙ্গল কামনা করে আজকের পোস্ট শেষ করছি, ধন্যবাদ সকলকে।

আরো পড়ুনঃ 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

উপায় কী এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url