কন্টিনিউটি টেস্ট কি | কন্টিনিউটি টেস্ট কেন করা হয়

কন্টিনিউটি টেস্ট এর নাম আমরা যারা ইলেকট্রিক্যাল ইন্সটলেশন এবং মেইনটেনেন্স এর কাজ করে থাকি তাদের সকলের পরিচিত একটি নাম। যারা দক্ষ টেকনিশিয়ান তাদের কাজের নির্ভূলতা পরীক্ষা করার জন্য কন্টিনিউটি টেস্ট করে থাকে। যারা কন্টিনিউটি টেস্ট কি এবং কন্টিনিউটি টেস্ট কেন করা হয় এ বিষয়টি সঠিকভাবে জানে না তাদের জন্য আজকের পোস্টটি লেখা। আপনারা আজকের পোস্ট পড়লে কন্টিনিউটি টেস্ট সম্পর্কে ভালো একটি ধারনা পেয়ে যাবেন।

আরো পড়ুনঃ ম্যাগনেটিক কন্টাক্টরের বিস্তারিত আলোচনা।

আমাদের বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত, প্রতিষ্ঠান, দোকান ইত্যাদিতে বৈদ্যুতিক কাজ করা শেষে সরবারহ অথবা সংযোগ করার পূর্বে ওয়্যারিং এর বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয় যার যাকে আমরা ওয়্যারিং টেস্টিং বলে জানি। যেমন- কন্টিনিউটি টেস্ট, পোলারিটি টেস্ট, ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স টেস্ট ইত্যাদি। ওয়্যারিং টেস্টিং এর ভিতরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট হলো কন্টিনিউটি টেস্ট। কন্টিনিউটি টেস্টের মাধ্যমে আমরা আমাদের ওয়্যারিং শেষে ওয়্যারিং ত্রুটি বিহীন এবং নিরাপদ হয়েছে কিনা তার একটি সঠিকতা যাচাই করা হয়।

কন্টিনিউটি টেস্ট কি

কন্টিনিউটি টেস্ট কি

কন্টিনিউটির বাংলা হলো নিরবচ্ছিন্নতা। বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং এ কাজ শেষ করার পর সরবারহ প্রদান করার পূর্বে উক্ত ওয়্যারিং এর নিরবচ্ছিন্নতা সঠিক আছে কিনা তা জানার জন্য যে টেস্ট করা হয় তাকে কন্টিনিউটি টেস্ট বলে। কোন ওয়্যারিং এ কন্টিনিউটি ঠিক না থাকলে সার্কিটে সংযুক্ত লোডসমূহ সঠিকভাবে কাজ করবে না। তাই সবসময় কোন ওয়্যারিং শেষ করার পর অবশ্যই কন্টিনিউটি টেস্ট করা উচিত।

কন্টিনিউটি টেস্ট কেন করা হয়

আমরা এতক্ষন ধরে কন্টিনিউটি টেস্ট কি তা সম্পর্কে ধারনা অর্জন করলাম, কন্টিনিউটি টেস্ট কেন করা হয় তার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ন কারন নিচে তুলে ধরা হলো-
  • সার্কিট সঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করতে কন্টিনিউটি টেস্ট করা হয়।
  • সার্কিটের প্রতিটি লোড নিরবচ্ছিন্ন আছে কিনা তা জানতে কন্টিনিউটি টেস্ট করা হয়।
  • ওয়্যারিং এ কোথাও শর্ট সার্কিট আছে কিনা সেটা জানতে কন্টিনিউটি টেস্ট করা হয়।
  • ওয়ারিং এর ওপেন শাখা নির্নয় করতে কন্টিনিউটি টেস্ট করা হয়।

কন্টিনিউটি টেস্ট কি দিয়ে করা যায়

কন্টিনিউটি টেস্ট করার জন্য নিচের পরিমাপক যন্ত্রগুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে। -
  • ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স টেস্টার মেগার
  • মাল্টিমিটার বা অ্যাভোমিটার
  • কন্টিনিউটি টেস্টার
  • সিরিজ টেস্টিং ল্যাম্পের সাহায্যে
উপরের সকল যন্ত্রগুলো ব্যবহার করা হলেও মাল্টিমিটার ও সিরিজ টেস্টিং ল্যাম্প অধিকহারে ব্যবহার করতে দেখা যায়।

সিরিজ টেস্টিং ল্যাম্প দিয়ে কন্টিনিউটি টেস্ট করার পদ্ধতি

সিরিজ টেস্টিং বোর্ড দিয়ে আমরা একটি সার্কিটের কন্টিনিউটি টেস্ট করতে পারি। তবে কয়েকটি ধাপ অথবা পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে আমাদেরকে। নিচে প্রতিটি ধাপ দেওয়া হলো-
  • প্রথমে মেইন সুইচ বন্ধ/অফ করতে হবে, মেইন সুইচ থেকে ফিউজ খুলে সরবারহ সম্পূর্নরুপে বিচ্ছিন্ন করে নিতে হবে। সার্কিট ব্রেকার থাকলে সার্কিট ব্রেকারকে অফ করে দিতে হবে।
  • যে সকল স্থানে হোল্ডার আছে সেখানে বাতি লাগিয়ে রাখতে হবে, আর যেখানে হোল্ডারের পরিবর্তে সিলিং রোজ আছে সেখানে সিলিং রোজ থেকে বের হওয়া তারদুটি শর্ট করে দিতে হবে।
  • ডিস্ট্রিবিউশন বোর্ডের অথবা সুইচ বোর্ডের ফিউজ থাকলে সেটা লাগিয়ে রাখতে হবে।
  • ওয়্যারিং এ ব্যবহৃত সুইচ বোর্ডের সুইচ সমূহ অফ করে রাখতে হবে।
  • এবার সিরিজে সংযুক্ত টু-পিন প্লাগের দুই প্রান্ত নিয়ে মেইন সুইচে ব্যবহৃত দুটি ফিউজের উপরের দুই প্রান্তে লাল তারে লাল প্রান্ত এবং কালো তারে টু পিন প্লাগের কালো প্রান্ত লাগিয়ে দিতে হবে। যদি মেইন সুইচ এর পরিবর্তে সার্কিট ব্রেকার থাকে তাহলে সার্কিট ব্রেকারের উপরের প্রান্তে সিরিজে সংযুক্ত টু-পিন প্লাগ লাগিয়ে দিতে হবে।
  • এরপরে সুইচ বোর্ডের প্রথম সুইচটি অন করতে হবে, সুইচ অন করলে যদি সুইচের সাথে সংযুক্ত বাতিটি জ্বলে উঠে তাহলে বুঝবো আমার উক্ত সুইচের সাথে সংযুক্ত লোডের কন্টিনিউটি ঠিক আছে। তবে এ সময় সিরিজ বাতিটিও জ্বলতে থাকবে মৃদু আলোয়। এ সুইচের কাজ শেষ হয়ে গেলে সুইচ বন্ধ করে দিতে হবে।
  • তারপরে আরেকটি সুইচ প্রদান করে উপরের নিয়মে কন্টিনিউটি টেস্ট করতে হবে। এভাবে যে প্রতিটি সুইচ অন অফ করার মাধ্যমে আমরা সার্কিটে সংযুক্ত লোডগুলোর কন্টিনিউটি পরীক্ষা করতে পারি।
  • তবে যেখানে সিলিং রোজ লাগানো আছে সেখানের তারদুটো যেহেতু শর্ট করা তাই যখন সিলিং রোজের সাথে সংযুক্ত সুইচ অন করবো তখন সিরিজ বাতিটি পূর্ন আলোয় জ্বলতে থাকবে। কারন হলো সার্কিটে শর্ট সার্কিট হলে সিরিজ বাতি পূর্ন আলোয় জ্বলে এটা আমরা সকলে জানি।
  • সার্কিটে কোথাও যদি রেগুলেটর দিয়ে বৈদ্যুতিক পাখাকে নিয়ন্ত্রন করা হয় সেখানে অবশ্যই রেগুলেটর কমানো বা বাড়ানোর মাধ্যমে সিরিজ বাতির আলোর উজ্জলতা কমবেশি হবে।
এভাবে আমরা প্রতিটি লোডের আলাদা আলাদা করে কন্টিনিউটি টেস্ট করতে পারবো। কারো যদি বুঝতে সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে নিচের ভিডিওটি দেখতে পারেন তাহলে আরো ভালো ধারনা অর্জন করতে পারবেন।

মাল্টিমিটার  দিয়ে কন্টিনিউটি টেস্ট করার পদ্ধতি

মাল্টিমিটার দিয়ে কন্টিনিউটি টেস্ট করার পদ্ধতিও সিরিজ টেস্টিং পদ্ধতির মত। তফাত হলো সিরিজ ল্যাম্পে বাতি জ্বলে আর মাল্টিমিটারে ডিসপ্লেতে সংযুক্ত কাঁটাটি নড়াচড়া করে। কন্টিনিউটি টেস্টের সময় মাল্টিমিটারকে অবশ্যই ওহমমিটার স্কেলে রাখতে হবে এবং মাল্টিমিটারের পয়েন্টারটিকে শূন্যতে (০) তে সেট করে নিতে হবে। নিচে মাল্টিমিটার দিয়ে কিভাবে কন্টিনিউটি টেস্ট করা হয় তার ধাপগুলো তুলে ধরা হলো।
  • প্রথমে মেইন সুইচ বন্ধ/OFF করতে হবে, মেইন সুইচ থেকে ফিউজ খুলে সরবারহ সম্পূর্নরুপে বিচ্ছিন্ন করে নিতে হবে। সার্কিট ব্রেকার থাকলে সার্কিট ব্রেকারকে OFF করে দিতে হবে।
  • যে সকল স্থানে হোল্ডার আছে সেখানে লোড লাগিয়ে রাখতে হবে, আর যেখানে হোল্ডারের পরিবর্তে সিলিং রোজ আছে সেখানে সিলিং রোজ থেকে বের হওয়া টার্মিনালগুলো শর্ট করে দিতে হবে।
  • ডিস্ট্রিবিউশন বোর্ডের অথবা সুইচ বোর্ডের ফিউজ থাকলে সেটা লাগিয়ে রাখতে হবে।
  • ওয়্যারিং এ ব্যবহৃত সুইচ বোর্ডের সুইচ সমূহ অফ/বন্ধ করে রাখতে হবে।
  • মাল্টিমিটারের প্রোব দুটিকে মেইন সুইচের ফিউজগুলোর উপরের প্রান্ত বরাবর ধরতে হবে, মেইন সুইচের পরিবর্তে সার্কিট ব্রেকার থাকলে সার্কিট ব্রেকারের উপরের প্রান্তের লাল তারে লাল প্রোব আর কালো তারে কালো প্রোব লাগাতে হবে।

  • এরপর সার্কিটের সুইচ বোর্ডের প্রথম সুইচটি অন করতে হবে, অন করার পর যদি মাল্টিমিটারের কাঁটাটি পাঠ দিয়ে শূন্য অবস্থানে বা তার কাছাকাছি যায় তখন আমাদের বুঝতে হবে উক্ত সুইচের কন্টিনিউটি বা উক্ত লোডের কন্টিনিউটি সঠিক রয়েছে।
  • তারপরে পর্যায়ক্রমে সকল সুইচ অন অফ করে প্রতিটি লোডের কন্টিনিউটি চেক করে নিতে হবে।
  • যদি কোথাও রেগুলেটর সংযুক্ত থাকে তাহলে মাল্টিমিটার দিয়ে চেক করার সময় সুইচ চাপ দিলে মাল্টিমিটারের কাঁটা হালকা নড়তে পারে, কিন্তু বেশিরভাগ সময়ে মাল্টিমিটারের কাঁটা নড়ে না।
এভাবে মাল্টিমিটার দিয়ে ওয়্যারিং শেষে কন্টিনিউটি টেস্ট করা হয়ে থাকে। আপনারা আপনাদের বাসাবড়িতে বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং সম্পন্ন হয়ে গেলে কন্টিনিউটি টেস্ট করে নিতে পারেন।

কন্টিনিউটি টেস্ট করার পদ্ধতি ভিডিওতে দেখুন

পোলারিটি টেস্ট কি

বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং সম্পন্ন হয়ে গেলে আরেকটি টেস্ট করতে হয় যার নাম পোলারিটি টেস্ট। পোলারিটি টেস্ট সুইচের মধ্যে করা হয় বিধায় এ টেস্টের নাম অনেকে সুইচের পোলারিটি টেস্ট বলেও জানে। আমরা জানি আমাদের ফেজ লাইন সবসময় সুইচে সংযুক্ত থাকে, কিন্তু কোথাও যদি এমন হয় যে সুইচে নিউট্রাল সংযোগ দেওয়া হলো, তাহলে কিন্তু আমরা সুইচ বন্ধ করলে বাতি বন্ধ হবে ঠিক কিন্তু পজেটিভ লাইন নিয়ন্ত্রন হবে না। এতেকরে আমরা যখন কাজ করতে যাব লাইনে সবসময় ফেজ সংযোগ থাকার কারনে আমরা বৈদ্যুতিক শক পাবো।

আরো পড়ুনঃ টিউব লাইটে চোক কয়েলের কাজ কি।

তাই এ দূর্ঘটনা থেকে বাঁচার জন্য আমাদের কে অবশ্যই ফেজ তার সুইচে সংযোগ করতে হবে। তাহলে সুইচ বন্ধ করে দিলে আর পজেটিভ লাইন আর সার্কিটের ভিতরে প্রবেশ করতে পারবে না। আমাদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য সুইচকে অবশ্যই তাই ফেজ লাইনে সংযুক্ত করতে হবে।

ফেজ লাইন সুইচে আছে কিনা এটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য যে টেস্ট করা হয় তাকেই পোলারিটি টেস্ট বলে। নিয়ন টেস্টারের সাহায্যে খুব দ্রত পোলারিটি টেস্ট করা যায়। নিয়ন টেস্টারের অগ্রভাগ সুইচের প্রন্তে এবং অন্যপ্রান্তে বৃদ্ধাঙ্গুলি স্পর্শ করলে যদি টেস্টারে থাকা বাতিটি জ্বলে উঠে তাহলে আমরা বুঝতে পারবো আমাদের সুইচের পোলারিটি বা লাইনের পোলারিটি সঠিক আছে। আর যদি না জ্বলে তাহলে বুঝা যাবে পোলারিটি সঠিক নাই।

শেষকথাঃ

আমরা আজকে বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং শেষে কন্টিনিউটি টেস্ট কিভাবে করবো, সুইচের পোলারিটি টেস্ট কিভাবে করবো তা ভালোভাবে জানতে পেরেছি। আপনাদের যদি কারো কন্টিনিউটি টেস্ট কি অথবা কন্টিনিউটি টেস্ট কেন করা হয় এ বিষয় বুঝতে অসুবিধা হয় আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

আর এমন নিত্যনতুন পোস্ট পেতে অবশ্যই আমাদের উপায় কী ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। পোস্ট লিখতে গিয়ে ছোটখাট দোষত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করছি।-ধন্যবাদ।

আরো পড়ুনঃ বাসাবাড়িতে বিদ্যুৎ বিল কমানোর উপায়।

আরো পড়ুনঃ ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স এর মধ্যাকার পার্থক্য কি।

আরো পড়ুনঃ গাজী পানির ট্যাংক দাম ১০০০ লিটার।

আরো পড়ুনঃ আর্থিং করার পদ্ধতি এবং আর্থিং কেন ব্যবহার করা হয়।

আরো পড়ুনঃ বৈদ্যুতিক লাইনে ফিউজ ব্যবহার করা হয় কেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

উপায় কী এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url