মাইক্রোওয়েভ ওভেন কিভাবে কাজ করে | মাইক্রোওয়েভ ওভেন প্রাইস

মাইক্রোওয়েভ ওভেন সকলের একটি পরিচিত নাম। কিন্তু ওভেন কিভাবে কাজ করে, কোন কোন কাজে আমরা মাইক্রোওয়েভ ওভেন ব্যবহার করবো এটা আমাদের অনেকের অজানা। আজকের পোস্টে মাইক্রোওয়েভ ওভেন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। যারা মাইক্রোওয়েভ ওভেন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান আজকের পোস্টটি তাদের জন্য।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে রাডার প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মার্কিন কোম্পানি রেথিয়ন সর্বপ্রথম রাডারেঞ্জ (Radarange) নামক বানিজ্যিক মাইক্রোওয়েভ ওভেন আবিষ্কার করেন। যা ১৯৪৬ সালে প্রথম বিক্রয় হয়। পরবর্তীতে রেথিয়ন আবারো আবাসিক কাজের জন্য ১৯৫৫ সালে ট্যাপ্পন নামক আরেকটি মাইক্রোওয়েভ বাজারে আনেন। কিন্তু তখন এ সকল মাইক্রোওয়েভ ওভেন আকারে অনেক বড় ছিল এবং ওভেনগুলোর দামও অনেক বেশি ছিল।

পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালে আমানা কর্পোরেশন আধুনিক ভাবে কাউন্টার ওভেন বা টেবিলে ব্যবহার উপযোগী ওভেনকে বাজারজাত করে। বর্তমানে উক্ত প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে উন্নতমানের মাইক্রোওয়েভ ওভেন তৈরি করা হচ্ছে। আধুনিক সভ্যতায় ওভেনের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আরো পড়ুনঃ ওয়ালটন গ্যাসের চুলার দাম ২০২৩।

মাইক্রোওয়েভ ওভেন কাকে বলে?

মাইক্রোওয়েভ ওভেন কিভাবে কাজ করে
মাইক্রোওয়েভ ওভেন সাধারন ফ্রিকুয়েন্সির এনার্জিকে মাইক্রোওয়েভ ফ্রিকুয়েন্সির এনার্জিতে রুপান্তর করে থাকে। এই এনার্জি থেকে তাপ উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় বা অটোমেটিক পদ্ধতিতে খাদ্য দ্রব্য রান্না করা হয়। 

তাই এভাবে মাইক্রোওয়েভের সজ্ঞা দেওয়া যায়- যে যন্ত্রের সাহায্যে মাইক্রোওয়েভ ফ্রিকুয়েন্সির এনার্জি উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রণ করে খাদ্যদ্রব্য রান্না করা হয়, তাকে মাইক্রোওয়েভ ওভেন বলা হয়। মাইক্রোওয়েভ ওভেনকে সংক্ষেপে মাইক্রোওভেন বা ইলেকট্রনিক ওভেন ও বলা হয়।

মাইক্রোওয়েভ ওভেনের প্রকারভেদ

ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে মাইক্রোওয়েভ ওভেন দুই প্রকার। যথা- 
  • কনভেকশন মাইক্রোওয়েভ ওভেন
  • সলো মাইক্রোওয়েভ ওভেন
কনভেকশন মাইক্রোওয়েভ ওভেনঃ কনভেকশন মাইক্রোওয়েভ ওভেনকে গ্রিল ওভেন ও বলে অনেকে। কনভেকশন ওভেন দুটি আলাদা মুডে কাজ করে থাকে। মাইক্রোওয়েভের সাথে এখনে হিটিং এলিমেন্ট থাকে যেখানে তাপ উৎপন্ন করে এবং ফ্যানের সাহায্যে মাইক্রোওভেনে বাতাস সমানভাবে বিতরন করে। তাই কনভেকশন মাইক্রোওভেনে খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

সলো মাইক্রোওয়েভ ওভেনঃ সলো মাইক্রোওভেনে মাইক্রোওয়েভ ব্যবহার করে খাবার গরম করে সেটিকে খাবার উপযোগী করে তৈরি করা হয়।

মাইক্রোওভেন কিনার ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়সমূহ

আপনার জন্য কোন ধরনের মাইক্রোওয়েভ ওভেন দরকার এটা নির্ভর করে ক্যাপাসিটি, কাজের ধরন ও পরিচালনা শক্তির উপর। পরিবারের সদস্য সংখ্যা যদি ২ থেকে ৪ জনের মধ্যে হয় তাহলে ২০ থেকে ২৫ লিটার ওভেন নির্বাচন করা উচিত। আর যদি পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৪ থেকে ৬ জনের ভিতরে হয় তাহলে ৩০ লিটারের ওভেন নির্বাচন করা উচিত। যদি পরিবারের লোকজন আরো বেশি হয় তাহলে ৩০ লিটারের বেশি ক্যাপাসিটি সম্পন্ন ওভেন নির্বাচন করা উচিত।


আপনারা যদি বাসা বাড়িতে ব্যবহারের জন্য মাইক্রোওয়েভ ওভন নির্বাচন করতে চান তাদের জন্য সলো মাইক্রোওভেন ব্যবহার করাই উত্তম। আর যদি আপনি হোটেল রেস্তোরা এর জন্য মাইক্রোওয়েভ ওভেন কিনতে চান তাহলে কনভেকশন টাইপ ওভেন নির্বাচন করতে হবে। এর সাহায্যে খুব দ্রত সময়ে গ্রীল, বিফ কারির মত খাবার রান্না করা যায়। তাই অনেকে কনভেকশন টাইপ ওভেন বাসাবাড়িতে ব্যবহার করে।

মাইক্রোওয়েভ ওভেন কিভাবে কাজ করে

মাইক্রোওয়েভ হলো রেডিও ফ্রিকুয়েন্সির একটি শর্ট ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ, যা ওভেনে ভিতরে কাজ করে থাকে। রান্নার জন্য খাদ্য মাইক্রোওয়েভ ওভেনে দিলে খাদ্য দ্রব্যের জলীয়বাস্প মাইক্রোওয়েভ এনার্জি দিয়ে উৎপন্ন তাপ শোষণ করে। মাইক্রোওয়েভ ফ্রিকুয়েন্সি এনার্জির কারনে খাদ্য দ্রব্যের অণুগুলোতে ঘর্য়নের ফলে খুব কম সময়ে রান্না হয়ে যায়।

মাইক্রোওয়েভ ওভেনের কুকিং সুইচ অন করলে স্টিরার মোটর, ব্লোয়ার মোটর, ম্যাগনেট্রন টিউব, রিলে, টাইমার সার্কিট সবগুলো একটিভ হয়। ওভেনের ম্যাগনেট্রন টিউব থেকে নির্গত মাইক্রোওয়েভ হিট এনার্জি স্টিরার মোটর সমভাবে কুকিং চেম্বারে ছড়িয়ে দেয়। ব্লোয়ার মোটর এর ফ্যান ম্যাগনেট্রন টিউবকে ঠান্ডা রাখে। কুকিং এর জন্য যে সময় নির্ধারন করা থাকে উক্ত সময় শেষ হয়ে গেলে টাইমার সুইচ রিলের মাধ্যমে ওভেনের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।

মাইক্রোওয়েভ ওভেনের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সার্বক্ষনিক পর্যবেক্ষন করতে হয়। ওভেনে যে পরিমান হিট এনার্জি উৎপাদন করবে তা খাদ্য দ্রব্যের প্রয়োজন অনুসারে হিট কন্ট্রোল সুইচের মাধ্যমে নির্ধারন করে দিতে হয়। মাইক্রোওভেন ওভেনে টাইমার মোটর কুকিং টাইম নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। থারমো কাট-আউট ম্যাগনেট্রন টিউবকে অতিরিক্ত হিট থেকে রক্ষা করে থাকে।

মাইক্রোওয়েভ ওভেন এর ব্যবহার

মাইক্রোওভেনে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের খাদ্য দ্রব্য রান্না করা যায়। বর্তমানে বেশ কিছু ফাস্টফুড আইটেমের রান্নার জন্যও ওভেন বেশ ভালো কাজ করে থাকে। ওভেনের বডিতে রান্না নিয়ন্ত্রনের জন্য সিলেকটর নব থাকে। কুকিং চেম্বার খুলে পাত্রে রান্নার যাবতীয় খাদ্যদ্রব্য দিয়ে সিলেক্টর সুইচ অন করলে অটোমেটিকভাবে নির্ধারিত সময়ের ভিতরে যে খাবার রান্না হয়ে যায়।

মাইক্রেওয়েভ ওভেনে খাদ্যকে সুষম ও দ্রুত রান্না করা যায়। বিশেষ করে পূর্বের রান্না করা খাবার গরম করতে  মাইক্রোওয়েভ ওভেন ব্যবহার করা হয়। মাইক্রোওভেনে খাবার ভাজা পোড়া বা বেকিং করা যায় না, তাই অনেকে পেশাদার রান্নার কাজে ওভেনকে ব্যবহার করে না। বর্তমানে বাসাবাড়ির পাশাপাশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা দোকানেও খাবার গরম করতে ইলেকট্রিক ওভেন এর ব্যবহার লক্ষ করা যায়।

পপকর্ন, হিমায়িত শাকসবজি, পাস্তা বা ফাস্টফুড আইটেমের খাবারগুলো খুব সুন্দরভাবে তৈরি করে দিতে পারে মাইক্রোওয়েভ ওভেন। বর্তমানে মাইক্রোওভেনে চােইল্ড লক সিস্টেম রয়েছে যা ব্যবহার করে ওভেনের দরজা লক করে রাখা যায়। এতে বাচ্চারা ওভেনের দরজা খুলতে পারে না। তাই গরম খাবার পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভবনাও নেই।

মাইক্রোওয়েভ ওভেন প্রাইস ইন বাংলাদেশ

মাইক্রোওয়েভ ওভেনের দাম নির্ভর করে পন্যের মডেল, প্রযুক্তি, ব্রান্ড ও অন্য সকল ফিচারের উপর। বর্তমানে বাজারে ভিশন, ওয়ালটন, সিংগার, LG কোম্পানিসহ আরো বেশকিছু কোম্পানির মাইক্রোওয়েভ ওভেন পাওয়া যায়। ৮০০০ ( আট হাজার) টাকা থেকে শুরু করে ৪০,০০০ (চল্লিশ হাজার) টাকা দামের ওভেন বাজারে পাওয়া যায়। 

বর্তমানে আপডেট মাইক্রোওভেন গুলোর সুবিধা হলো আপনি ওভেনগুলোতে পেয়ে যাবেন অটো পাওয়ার অফ মুড যা নির্ধারিত সময় পরে অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যাবে। এতে করে বিদ্যুতের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। আপনি যদি ওভেনে গ্রিলসহ ভারি খাবার রান্না করতে চান সেক্ষেত্রে ১০,০০০ (দশ হাজার) টাকার উপরে বাজেট রাখা উত্তম মাইক্রোওভেন কিনার ক্ষেত্রে।

বর্তমানে অনলাইন ও অফলাইন উভয় স্থান থেকেই আপনারা মাইক্রোওয়েভ ওভেন কিনতে পারবেন। সরাসরি নিকটস্ত বাজারে গিয়ে দেখেশুনে কিনতে পারেন। অথবা আপনি যদি অনলাইনে মাইক্রোওয়েভ ওভেন প্রাইস লিখে সার্স করেন তাহলেও অনেক অনলাইন মার্কেটপ্লেস আসবে, সেখান থেকেও আপনারা আপনাদের পছন্দের ওভেনটি ক্রয় করতে পারেন।

শেষকথাঃ

পুরো পোস্টে মাইক্রোওয়েভ ওভেন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়ে যা আপনাদের কাজের ক্ষেত্রে অনেক উপকারে আসবে বলে আশা করছি। মাইক্রোওয়েভ ওভেন কিভাবে কাজ করে এবং মাইক্রোওয়েভ ওভেন প্রাইস ইন বাংলাদেশ সম্পর্কে আপনাদের যদি কোন কিছু জানার থাকে আমাদের অবশ্যই জানাবেন।

আপনাদের জন্য আরো কিছু পোস্ট-

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

উপায় কী এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url